বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮

ইসলামের নির্দেশ অনুযায়ী স্বামীকে পূরণ করতে হবে স্ত্রীর মৌলিক ১০ টি হক




বিয়ের পর বাসর রাত মুমিন জীবনের অন্যতম রাত। যারা পরকীয়া করে, লিভ টুগেদার করে, তারা এ রাতের মর্ম বুঝবে না। যারা বেশ্যা বা বহুগামিতা তাদের কাছে এ রাত বাতুলতা মাত্র। আমরা এ পর্বে বাসর রাতে অবশ্যই পালনীয় কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করব।


০১. গোলাপ ফুল দিয়ে দুজন দুজনাকে বরণ করে নিতে হবে।

০২. উভয়ই মহান আল্লাহকে যে ভালবাসবেন তা পরিষ্কার ভাবে দুজনা বোঝা পড়া করবেন।

০৩. হানিমুনে কোথায় যাবেন তা বাসর রাতেই ঠিক করবেন, সে ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে এটা ঠিক করতে হবে যে, সবচেয়ে পৃথিবীর মূল্যবান যায়গা মক্কা মদীনায় যাওয়া এবং ওমরা করার পরিকল্পনা করা।

০৪. ছোট খাট ভুলের জন্য কাউকে তিরষ্কার না করা। কাউকে ছোট না করা।

০৫. কোন পক্ষের আত্নীয় স্বজনকে ছোট না করা, গালি না দেওয়া, অপমান না করা।

০৬. জীবনের প্রথম ভালবাসার রাত, তাই ভালবাসা অক্ষুন্ন রাখা।

০৭. দুজনাতে একটু খোশ গল্প করা, জীবন থেকে কোন গল্প বলা।

০৮. ভবিষ্যত জেনারেশনের ব্যাপারে আলাপ সেরে নেওয়া। তবে বেশী দূর অগ্রসর না হওয়াই ভাল।

০৯. মোহরানা যদি বাকি থাকে সেটা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া, অল্প দিনের মধ্যেই মোহরানা পরিশোধ করা। স্ত্রী যদি চাকুরি করে তবে টাইম টেবিলটা নিয়ে একটু পরিষ্কার

১০. এ রাতই হল উত্তম ভালবাসার রাত। দুজনার সব আকুতি মেশানো ভালবাসা দিয়ে দুজনাকে জয় করা। কোন ভাবেই যেন ফজরের নামাজ কাজা না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা ।

ইসলামে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়েই হচ্ছে একমাত্র বৈধ উপায়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা এবং তা যথারীতি আদায় করার জন্য ইসলামে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীকে মোহরানা প্রদান করা ফরজ।

কোরআন ও হাদীসের আলোকে মোহরানা :

মোহরানা সম্পর্কে কোরআনের বানী :

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের নিকট যে যৌন স্বাধ গ্রহন কর, তার বিনিময়ে তাদের মোহরানা ফরজ মনে করে আদায় কর।’ (সূরা নিসা-২৪)

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
‘অতঃপর নারীদের অভিভাবকের অনুমুতি নিয়ে তাদের বিয়ে কর এবং তাদের মোহর যথাযথভাবে আদায় করে দাও।’ (সূরা নিসা-২৫)

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“স্ত্রীদের প্রাপ্য মোহরানা আদায় করে দাও, খূশী হয়ে ও তাদের প্রাপ্য অধিকার মনে করে।’ (সূরা নিসা-৪)

অত্র আয়াত সমুহ প্রমাণ করে যে, মোহরানা ফরজ বা আদায় করা অপরিহার্য।

মোহরানা সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) এর বানী :

উক্ববা ইবনু আমের (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “অবশ্যই পূরণীয় শর্ত হচ্ছে, যার বিনিময়ে তোমরা স্ত্রীর যৌনাঙ্গ নিজেদের জন্য হালাল মনে কর।’ (বুখারী,মুসলিম)

মহানবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন মেয়েকে মোহরানা দেয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু সে মোহরানা আদায় করার তার ইচ্ছে নেই, সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে অপরাধী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।’ (মুসনাদে আহমেদ)।

সুতরাং মোহরানা স্ত্রীর এমন একটি প্রাপ্য যা তিনি স্বামীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে পাওনা হন, তবে স্ত্রী (স্বেচ্ছায় ও স্বত:স্ফূর্তভাবে) সময় দিলে বাকি রাখা যাবে। কিন্তু মোহরানার অর্থ আবশ্যিকভাবে পরিশোধ করতে হবে। বিবাহিত স্ত্রীকে অসহায় মনে করে ছলে-বলে-কৌশলে বা অজ্ঞতার সুযোগে মাফ করিয়ে নিলে মাফ না হয়ে তা হবে জুলুম-প্রতারণা। এ জুলুম প্রতিরোধকল্পে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা করেন – ‘যদি স্ত্রী নিজের পক্ষ থেকে স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে মোহরের কিছু অংশ ক্ষমা করে দেয়, তবে তোমরা তা হৃষ্টচিত্তে গ্রহণ করতে পার।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৪)।

মোহরানা এককালীন আদায় করতে অক্ষম হলে, উত্তম হল কিছু অংশ নগদ আদায় করে বাকি অংশ পরে আদায় করা, তা ধীরে ধীরে কিস্তিতে পরিশোধ করা। তবে মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী যাতে তিনি সহজেই তা পরিশোধ করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান সমাজের দু:খজনক ঘটনা হলো-বিশাল আকারের মোহরানা বাধা হয় নামে মাত্র অথচ বহুলাংশে তা পরিশোধ করতে দেখা যায় না।

আমাদের সমাজে কি দেখতে পাচ্ছি ?

আজ থেকে ২০/২৫ বছর আগেও বিয়েতে অল্প পরিমান মোহরানা ধার্য করা হতো। স্ত্রীকে প্রদান করতো কিনা আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে বিয়েতে বেশী পরিমানে মোহরানা ধার্য করা হচ্ছে তার অন্যতম কারন হচ্ছে –

বিবাহ বিচ্ছেদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই মোহরানা বেশী ধার্য করা হয় যাতে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে ভয় পায়।

মিথ্যা ওয়াদা দিয়েই নব-দম্পর্তির সংসার জীবন শুরু হয় :

স্ত্রীকে মোহরানা আদায় করা ফরজ। আর এই ফরজ কাজটি না করে কিভাবে সংসার জীবন শুরু করবে? তাই বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে প্রথম সাক্ষাতেই এই বিষয়টি ফয়সালা করা হয়। বউকে পরবর্তীতে প্রদান করার ঘোষনা দিয়েই সংসার জীবন শুরু করতে হয়। অচত আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের নিকট যে যৌন স্বাধ গ্রহন কর, তার বিনিময়ে তাদের মোহরানা ফরজ মনে করে আদায় কর।’ তারপর মোহরানা আদায় না করে বছরের পর বছর স্ত্রীর সাথে বসবাস করে। স্ত্রীও সংসারের সুখ-শান্তি নষ্ট হবার ভয়ে স্বামীর কাছে মোহরানা অর্থ চাইতে সংকোচ করে। অনেকে স্বামী মোহরানার অর্থ আদায় না করেই কোন এক সময় না ফেরার দেশে চলে যায়। অনেকে সংসারে অশান্তি দেখা দিলে তালাকের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘঁটান আর তখনই স্বামীকে আদালতের রায়ের মাধ্যমে মোহরানার অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য হয়।

আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশকে অমান্য করে আজ আমরা বিয়েতে মোহরানা কে কত বেশী দিতে পারি, কে কত নিতে পারি সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছি। যার ফলে সংসারে অশান্তি,ভূল-বোঝাবুঝি, পরিশেষে বিচ্ছেদের মত ঘঁটনা ঘটে।

তাই সবাইকে বলছি, বিয়েতে সমতা রক্ষা করুন। কম মোহরানা ধার্য করুন। আর মোহরানা আদায় করেই সংসার জীবন শরুন। মনে রাখবেন, পরবর্তীতে প্রদান করার মিথ্যা প্রতিশ্র“তি দিয়ে সংসার শুরু করলেও যে কোন মুহুত্বে আপনার মৃত্যু হতে পারে। তখন আপনার স্ত্রী কার কাছে মোহরানা চাইবে? যদি মোহরানা আদায় করার মত কিছু না থাকে? স্ত্রীর মোহরানা আদায় না করে আপনি কি জান্নাতে যেতে পারবেন?

তাই কেবল সামাজিক স্টাটাস রক্ষার জন্য মোটা অংকের মোহরানা নয়; বরং সামর্থ্যরে মধ্যে মোহরানা বেঁধে নির্দিষ্ট সময়ে বাসর হওয়ার আগেই তা পরিশোধ করে দেয়া উচিত।

কাহিনীঃ জাফর তানিয়াকে ১৬ লাখ টাকা মোহরানা ধার্য করে বিয়ে করেছে। বিয়েতে জাফর তানিয়াকে দশ ভরি স্বর্ণ উপহার দেয়। দুই পরিবারের সম্মতিতে স্বর্নের মূল্য থেকে তিন লাখ টাকা উসুল দেখিয়ে বাকী টাকা পরে পরিশোধ করার অঙ্গীকার করে বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে বাসর রাতে জাফরের ভাবী রুমে প্রবেশ করে মোহরানার বাকী টাকাটা কিভাবে পরিশোধ করবে জাফরের কাছে জানতে চায়। জাফর পরবর্তীতে পরিশোধ করবে বলে ভাবীর সামনে তানিয়াকে জানায়। তানিয়া এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে জাফরকে নিয়ে স্বপ্নের বাসর রাত পার করে।

বাসর রাতে বিড়াল মারা নিয়ে বিবাহিত/অবিবাহিত নারী/পুরুষরা নানা গুঞ্জন করে থাকে। একেক একজন একেক দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখে। সবাই এই বিষয়টিকে নিয়ে হাসি-তামাশা করে। বিড়াল মারতে পারলে সবাই খুশী। তবে দুঃখ জনক হলেও সত্য যে আজকাল স্বামীরা বাসর রাতে বিড়াল মারা তো দুরের কথা উল্টো বউয়ের কাছে মাফ চাইতে হয়। কেন মাফ চাইতে হয় জানেন? তাহলে শুনুন।

আজ থেকে কয়েক দশক আগেও বিয়েতে খুব অল্প পরিমান মোহরানা ধার্য করা হত। বেশীর ভাগ স্বামী মোহরানা আদায় করে দিত। কেউবা বউয়ের নামে জমি লিখে দিত। কিন্তু আজকাল মোহরানা নিয়ে বর-কনে দু’পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি শুরু হয়।

ডিজিটাল এই যুগে তালাকের পরিমান দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই তালাক ঠেকাতে এখন মোহরানার পরিমান বেশী ধার্য করা হয়। মোহরানার টাকা স্বামী স্ত্রীকে দিতে পারবে কি পারবে না তা আর কেউ দেখে না। এখন বেশী টাকা মোহরানা ধার্য করে বিয়ে ঠিকিয়ে রাখার জন্য সবাই চেষ্টা করে। স্বামীকে চাপের মধ্যে রাখে। এই সুযোগে স্ত্রীদের পক্ষ থেকে তালাকের প্রস্তাব বেশী আসছে। তাই তালাকের পরিমান দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ইসলামে মোহরানা আদায় করে স্ত্রীর কাছে যেতে বলা হয়েছে। বর্তমানে বিয়েতে স্ত্রীকে উপহার দেয়া স্বর্নের মূল্য হিসাব করে কিছু টাকা উসুল দেখিয়ে মোহরানার বাকী টাকাটা বাকীর খাতায় রেখে দেয়া হয়। তাই মোহরানার টাকা শত ভাগ পরিশোধ না করে বাসর রাতে স্বামী স্ত্রীকে মোহরানার বাকী টাকা পরে পরিশোধ করার ওয়াদা করে থাকে। স্ত্রীও স্বামীর কথায় বিশ্বাস করে সংসার জীবন শুরু করে। তাই বাসর রাতে বিড়াল মারার পরিবর্তে উল্টো স্ত্রীর কাছে মোহরানার টাকা নিয়ে ছোট হতে হয়।

দাম্পত্য জীবনে কোন এক সময় ভুল-বুঝাবুঝি হলে তালাকের মাধ্যমে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে স্বামী স্ত্রীকে মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে হয়। মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে স্বামী জেলের ভাত খেতে হয়।

তাই বাসর রাতে বিড়াল মারা নিয়ে যারা অতি উৎসাহী তাদেরকে বলতে চাই, বাসর রাতে বিড়াল মারার আগে স্ত্রীর মোহরানা আদায় করুন। মোহরানা আদায় না করে যদি আপনার মৃত্যু হয় তাহলে আপনাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে –

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বাসর রাতে স্বামী-স্ত্রীর করণীয় কি পড়ে দেখুনঃ

বাসরঘর ও কনে সাজানো এবং তাদের জন্য দোয়া করাঃ

নতুন বর ও কনের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যেখানে সুন্দরভাবে সাজিয়ে সুসজ্জিত করে বরের নিকট পেশ করা হবে। যেসব মহিলারা কনেকে সাজাবে তারা তাদের (বর-কনে) জন্য কল্যাণ, বরকত ও সৌভাগ্যবান হওয়ার জন্য দোয়া করবে।

বর-কনের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা এবং কনেকে সাজানো সুন্নত। আসমা বিনতে ইযাযিদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুল (সাঃ) এর জন্য আয়েশাকে সুসজ্জিত করেছিলাম।

:- আলআমীন

Image may contain: 1 person, sitting

এই কাজগুলো করলে জীবনেও অভাব দূর হবে না



দুনিয়াতে অনেক মানুষ আছে যারা আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনের ক্ষেত্রে অলসতা বা দে রি করে বা তা করার সময় হয়নি কিংবা পরে করবে বলে রেখে দেয়। এ সব বিষয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন।

আল্লাহ তাআলা ইবাদত-বন্দেগি ও তার বিধি-বিধান পালনে আগ্রহী ও অলসতাকারীদের জন্য সুসংবাদ ও কঠোরতা প্রকাশ করেছেন। হাদিসে কুদসিতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন একটি ঘোষণাই এসেছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি নিজের অবসর সময় তৈরি কর ও ইবাদতে মন দাও; তাহলে আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র্য ঘুচিয়ে দেব।

আর যদি তা না কর; তবে-

তোমার হাতকে ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব কখনোই দূর হবে না।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

উল্লেখিত হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী যারা ইবাদত-বন্দেগিসহ যাবতীয় বিধি-বিধান পালনে নিজেকে তৈরি করবে; তাদের অন্তরকে আল্লাহ তাআলঅ প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেবেন এবং তাদের অভাব-অনটন দূর করে দিবেন।

পক্ষান্তরে যারা নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগিসহ আল্লাহর বিধি-বিধান পালনে ব্যস্ততা দেখাবে; বা সময় হয় না বলে ইবাদত-বন্দেগিতে নিজেদেরকে পিছিয়ে রাখবে; তাদেরকে আল্লাহ তাআলা সব সময়ই ব্যস্ততায় রাখবেন এবং কখনোই তাদের অভাব দূর হবে না।

সুতরাং ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ততা বা তাড়াহুড়ো বা অলসেমি নয় বরং সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেষিত ও নির্ধাররিত ইবাদত যথাযথ পালন করে দুনিয়ার স্বচ্ছলতা ও স্বচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন লাভের পাশাপাশি পরকালের সফলতা লাভ করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার জীবনে ইবাদত-বন্দেগি ও বিধি-বিধান পালনের মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বচ্ছলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। অবহেলা আলসেমি থেকে নিজেকে বিরত রেখে দুনিয়ার অভাব ও ব্যস্ততা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

সুত্রঃ পিএনএস

মুহাম্মদ (সা.) এর চিকিৎসার মূল্যবান তথ্য!

পিএনএস, ইসলাম : মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) চিকিৎসক ছিলেন না। কিন্তু নবীজী (সা.) ১৪০০ বছর আগে উম্মতের মানসিক ও দৈহিক রোগ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে যেসব মূল্যবান তথ্য প্রদান করে গেছেন, তা যুগে যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটা সুস্পষ্ট পথ পদর্শক। ‘তিব্বে নববী’ গ্রন্থটির আলোকে মহানবী সাঃ-এর চিকিৎসা বিধানের সামান্য কিছু তথ্য তুলে ধরা হলোঃ


নবী করিম (সা.) নামাজকে আরোগ্যদানকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন। উনার কথাটির বিশ্লেষণে যাওয়া যাক¬, সুস্থ দেহ ও মনের জন্য একান্ত জরুরি বিষয় হচ্ছে ব্যায়াম। যা নামাজের মাধ্যমেই উত্তমভাবে পালন করা যায়। লক্ষ করুন, যদি আমরা শুদ্ধ নিয়মে নামাজ আদায় করি তাহলে আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গেরই মুভমেন্ট হয়। ফলে রক্তসঞ্চালনও সুন্দরভাবে চলতে থাকে। যেমন¬ সেজদা অবস্থায় হাত, পা, পেট, পিঠ, কোমর, রান ও শরীরের সব অঙ্গের জোড়া টানটান অবস্থায় থাকে। এ সময় রক্ত মস্তিষ্ক পর্যন্ত সঞ্চালিত হয়। আর সেজদা অবস্থায় মহিলাদের বুক রানের সাথে মিশে থাকে। এতে তাদের অভ্যন্তরীণ রোগ ব্যাধির উপশম হয়। অর্থাৎ নামাজ আত্মিক উন্নতির পাশাপাশি দৈহিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


হাদিস শরিফে বিভিন্ন রোগ ও প্রতিষেধকেরও উল্লেখ আছে। যেমন¬ নবীজী মেহেদিকে মাথাব্যথার প্রতিষেধক বলেছেন। তিনি এটাকে ফোঁড়া পাকায় এবং কাঁটা বিধলেও ব্যবহার করতেন। সূরা নাহলে মধুকে শেফাদানকারী ঘোষণা করা হয়েছে। আর নবীজীরও নির্দেশ, ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকাল বেলায় মধু সেবন করবে তার কোনো কঠিন ব্যাধি হবে না।’

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ এটাই প্রমাণ করেছে, মধু অগণিত রোগের ওষুধ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন। তবে হ্যাঁ, মধু কোন রোগে কতটুকু ব্যবহার প্রয়োজন সে বিষয়ে গবেষণা করার দায়িত্ব চিকিৎসকদেরই। হাদিসে কালোজিরা ও সিনাকে সর্বরোগের ওষুধ বলা হয়েছে। সিনা মস্তিষ্ক পরিষ্কার, বেদনানাশক, কৃমিনাশক, মাথাব্যথানাশক, গিঁটবাত ও নিউমোনিয়া রোগে উপকারী। অপর দিকে কালোজিরা বিভিন্ন ঠাণ্ডাজাতীয় ব্যাধির ওষুধ ছাড়াও যকৃৎ, পাকস্থলী, মূত্রাশয়ের শক্তিবর্ধক।

মহানবী সাঃ বলেছেন, ‘যখন রোগ যন্ত্রণা খুব কষ্টদায়ক হয় তখন এক চিমটি কালোজিরা, অতঃপর পানি ও মধু সেবন করবে।’ এ ছাড়াও ঘৃতকুমারী ত্বকের লাবণ্যতায়, যাইতুন নিউমোনিয়ায়, আগরকাঠ গলগণ্ডে, চিরতা ফোঁড়ার সমস্যায়, খেজুর ও বিহিদানা হৃদরোগে, যব পেট ব্যথায়, সুরমা দৃষ্টিশক্তিতে, বিলাতি ডুমুর অর্শ ও গেটে বাতে, ঠাণ্ডা পানি জ্বরে, লবণ হজম শক্তিতে ব্যবহারের নির্দেশ হাদিসে উল্লেখ আছে। হাদিস ও ইতিহাস বিশ্লেষকদের মতে নবীজীর প্রিয় খাবারের তালিকায় ছিল তরমুজ, মধু, লাউ, দুধ, যাইতুন, খেজুর, ভুনা গোশত, পাখির গোশত, মাছ আর তিনি অত্যধিক গরম ও বাসি খাবার এড়িয়ে চলতেন। তিন দুধ ও মাছ যেমন কখনো একসঙ্গে খেতেন না, তেমনি দু’টি গরম, দু’টি ঠাণ্ডা, নরম বা আঠালো জিনিসও একসাথে খেতেন না। নবীজী আমাদের ক্ষুধার সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং পরিমিত আহারেরও পরামর্শ দিয়েছেন।

সুত্রঃ পিএনএ

মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮

বউ-শাশুরীর সম্পর্কগুলো এরকম মধুর হলে কোন পরিবারেই অশান্তি থাকতো না।

ফজর নামাজে অভ্যস্ত করতে পারি নি।
তুমি এক মাসেই পেরেছ!
→আম্মু, আপনি কি পাথর আর স্বর্ণের গল্পটা
জানেন?
→না তো!
→কোন এক গ্রামে চলাচলের পথে একটি
বড় পাথর প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল।এক
ব্যক্তি রাস্তা পরিস্কার করতে মনস্থ
করল।সে একটি কুড়াল নিয়ে পাথরটি
ভাঙার চেষ্টা করল। ৯৯টি আঘাত করে সে
ক্লান্ত হয়ে গেল। তখনই সেখান দিয়ে এক
পথিক যাচ্ছিল। লোকটি পথিকের সাহায্য
চাইলো। পথিক কুড়াল নিয়ে আঘাত
করতেই পাথরটি ভেঙে গেল এবং ভেতর
থেকে স্বর্ণভর্তি একটি থলে বেরিয়ে
এল।
-পথিক: যেহেতু পাথরটি আমার আঘাতে
ভেঙেছে তাই থলেটি আমার।
-আমাকেও কিছু দাও।আমিও যে ৯৯টি
আঘাত করলাম।
পথিক রাজি হল না। দুজনে কাজীর কাছে
গেল। সব শোনে কাজী মীমাংসা
করলেন। স্বর্ণগুলোকে ১০০ভাগ করে ১ভাগ
দিলেন পথিককে বাকি ৯৯ভাগ
লোকটিকে দিয়ে দিলেন। বললেন,' "যদি
তোমার ৯৯টি আঘাত না হত তাহলে এই
পাথরটি ভাঙতোই না"।
-আম্মু,আপনি ২৮টি বছর পরিশ্রম করে সবকিছু
প্রস্তুত করেছেন। আমি শুধু শেষ আঘাতটাই
করেছি।
বউ-শাশুরীর সম্পর্কগুলো এরকম মধুর হলে
কোন পরিবারেই অশান্তি থাকতো না।

সোমবার, ১৬ জুলাই, ২০১৮

পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার জন্য বিশেষ আমল

এখন যেই আমল লিখছি, তা শুধু বিয়ের উদ্দেশ্যেই করা যাবে, এমন না। বরং এই আমলটি যেকোনো প্রয়োজন পূরণের জন্য করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ তায়ালা।
এই আমলের কয়েকটি শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো অবশ্যই সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
তা হল,
১: পাচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে।
২: মিথ্যা বলা ও হারাম খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩: মানুষকে ধোকা দেওয়া যাবেনা।
৪: সাধ্যমতো গরিবদের দান করতে হবে। এবং সুযোগ হলে মানুষের উপকার করতে হবে।এবং আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নেক আমল করার চেষ্টা করবে।
৫: বিশেষত যারা পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে এই আমল করবে, তারা সব ধরনের গুনাহ ছেড়ে তওবা করবে এবং ভবিষ্যতে গুনাহ না করার মন মানসিকতা তৈরি করবে।
৬: আর বিশেষত যাকে ভালবাসেন, তার জন্য, নিজের ও তার পরিবার এবং আগে ও পরের সকল মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে মাফ চাইবেন। এই ৬ নং শর্তটা দারুন ফলপ্রদ।
উপরের শর্তগুলো ঠিকমতো পালন করতে পারলে, আশা করা যায় যে, আপনার উদ্দেশ্য যত বড়ই হোক না কেন, ইনশাআল্লাহ তায়ালা আপনার উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালা পূরন করে দিবেন।
অতঃপর যেকোন দিন মাগরিবের নামাজ আদায় করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে। যার যে প্রয়োজন, সেই উদ্দেশ্য পূরনের নিয়তে নামাজ পড়বে। এবং নামাজ শেষে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে আকুতি মিনতি করে বিনয়ের সহিত নিজের উদ্দেশ্য পূরনের জন্য দোয়া করবে। কেঁদে কেঁদে দোয়া করার চেষ্টা করবে। কারন মহান আল্লাহ তায়ালা কান্না করে দোয়া করলে অনেজ খুশি হোন। আর আল্লাহ তায়ালা খুশি হলে "কেল্লা ফতেহ"। আর কেউ কাঁদতে না পারলে, কান্না করার ভান করবে,, এতেও আল্লাহ তায়ালা খুশি হোন।
অতঃপর দোয়া শেষে পশ্চিম মুখ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর অফুরন্ত রহমতের উপর ভরসা করে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত মহান আল্লাহ তায়ালার এই নাম খুব ভালবেসে ডাকতে থাকবে। প্রেমিক যেমন তার ভালবাসার মানুষকে আদর করে অনেক আবেগ নিয়ে ডাকে, ঠিক তেমনি আল্লাহ তায়ালাকে মহব্বতের সহিত ডাকতে থাকবেন।
يَا رَبِّ
"ইয়া রব্বি"
অর্থ, হে আমার পালনকর্তা!
আর ডাকার সময় মনে মনে ভাববেন যে, আপনি আল্লাহকে অনেক ভালবাসেন। আর আল্লাহ তায়ালা আপনাকে আরো অনেক বেশি ভালবাসেন। সুতরাং আল্লাহ তায়ালা আপনি যা চাইবেন, তাই খুশি হয়ে দান করবেন।
আমল শেষ করার পর মুনাজাত করবেন। মুনাজাতে ১ বার সুরা ফাতেহার প্রথম আয়াত পড়বেন এবং ১ বার নবিজি সাঃ এর উপর যেকোন একটি দুরুদ শরিফ পড়বেন। অতঃপর নিজের বাসনা পূরনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করবেন।
এভাবে মাগরিবের পরে লাগাতার ৭ দিন আমল করবেন। এবং ৭ দিন শেষ হওয়ার পর প্রতি বৃহস্পতিবার মাগরিবের পরে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়ে একই আমল করবেন। কোন কারণে বৃহস্পতিবারে করতে না পারলে শুক্রবার মাগরিবের পর করে নিবেন।
কখনো মহান আল্লাহ তায়ালার উপর থেকে ভরসা ত্যাগ করবেন না। বিরামহীনভাবে আমল চালাতেই থাকবেন। বিশেষত যারা পছন্দের মানুষকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে আমল করবেন। এভাবে আমল চালাতে থাকলে ইনশাআল্লাহ তায়ালা কয়েকমাসের মধ্যেই বিয়ের ভাল ব্যবস্থা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ চাইলে ১/২ মাসেও হতে পারে। আর না হলে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমল যত বেশি হবে, আপনার জন্য ততো ভাল।
আর দোয়া করার সময় বিবাহের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়েও দোয়া করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার ভালবাসার মানুষ যেন আপনাকে অনেক ভালবাসে, আপনাকে ছাড়া অন্য কারো দিকে না তাকায়। বিয়ের পর দাম্পত্যজীবনে যাতে মহান আল্লাহ তায়ালা রহমত ও বরকত দান করেন। আপনার পছন্দের মানুষ যেন, আপনার হক পুরোপুরিভাবে আদায় করে। অভাব - অনটন যাতে না হয়, ইত্যাদি দোয়া করবেন। সুতরাং আমল যত বেশি সময় নিয়ে করবেন এবং দীর্ঘদিন করবেন, আপনার দোয়ার বরকতে ততো বেশি কল্যাণ আল্লাহ পাক দান করবেন ইনশাআল্লাহ তায়ালা।
সুতরাং কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ হতে দেরী হলেও হতাশার কোন কারণ নেই। অনেক সময় আল্লাহ তায়ালা বান্দার ভালোর জন্যই দোয়া কবুল করতে দেরি করেন।অতএব আমাদের ধৈর্য ধরে আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে আমল চালাতে থাকা উচিৎ। আরর এতে আল্লাহ তায়ালাও অনেক খুশি হন, এর প্রমাণ পবিত্র কোরআনেও আছে।
পবিত্র কোরআনে মহান রব্বুল আ'লামীন বলেন,
يا ايه الذين امنوا استعينوا بالصبر والصلوۃ. ان الله مع الصبرين
সুরা বাকারা। আয়াত ১৫৩.
অর্থাৎ হে মুমিনগন! তোমরা নামাজ ও ধৈর্যধারণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাও। নিশ্চয় ধৈর্যশীলদের সাথে আল্লাহ আছেন।
সুতরাং এতেই প্রমাণ হয় যে, ধৈর্যধারণ করলে কত বেশি সুফল পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ তায়ালা।
আপনারা যাতে ভাল ফলাফল লাভ করতে পারেন, এজন্যইই এতো দীর্ঘ আলোচনা করলাম। প্রথমে ধারাবাহিক ৪১ দিনের আমল দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু অনেকের জন্য তা কষ্টকর হয়ে যেতে পারে, তাই ৭ দিনের আমল দিলাম।
এই আমল পাকিস্তনের দুইজন ভাল উস্তাদ থেকে পেয়েছি, আর আমিও কয়েকটি প্রয়োজন পূরনের উদ্দেশ্যে এর উপর আমল করে মহান আল্লাহ তায়ালার রহমতে ধারনার চেয়েও বেশি সুফল লাভ করেছি।
তো আপনার সবাইকে এই আমল গিফট হিসেবে পোস্ট করলাম। ইনশাআল্লাহ তায়ালা এর উপর আমল করলে কেউ নিরাশ হবে না।
যারা করবেন, তারা কমেন্ট করে অনুমতি নিয়ে নিবেন। দরকার হলে ইনবক্স করবেন
মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সফলতা দান করুন। আমিন।

শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৮

ইস্তেখারা বা কোন বিষয়ে আল্লাহতালার নিকট কল্যাণ চাওয়া।(ইস্তেখারা করার পদ্ধতী)

ইস্তেখারা শব্দের অর্থ :
ইস্তেখারা শব্দটি আরবী। আভিধানিক অর্থ, কোন কোন বিষয়ে কল্যাণ চাওয়া।

ইসলামী পরিভাষায় :
দুই রাকাত সালাত ও বিশেষ দুয়ার মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার নিকট পছন্দনীয় বিষয়ে মন ধাবিত হওয়ার জন্য আশা করা। অর্থাৎ দুটি বিষয়ের মধ্যে কোনটি অধিক কল্যাণকর হবে এ ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দু রাকায়াত সালাত ও ইস্তিখারার দুয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাওয়ার নামই ইস্তেখারা।

[ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী শরহু সহীহিল বুখারী]

ইস্তেখারা করার হুকুম :
এটি সুন্নাত। যা সহীহ বুখারীর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
ইস্তিখারা কখন করতে হয়?
মানুষ বিভিন্ন সময় একাধিক বিষয়ের মধ্যে কোনটিকে গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে দ্বিধা-দন্ধে পড়ে যায়। কারণ, কোথায় তার কল্যাণ নিহীত আছে সে ব্যাপারে কারো জ্ঞান নাই। তাই সঠিক সিদ্ধান্তে উপণিত হওয়ার জন্য আসমান জমীনের সৃষ্টিকর্তা, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সকল বিষয়ে যার সম্যক জ্ঞান আছে, যার হাতে সকল ভাল-মন্দের চাবী-কাঠি সেই মহান আল্লাহর তায়ালার নিকট উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। যেন তিনি তার মনের সিদ্ধান্তকে এমন জিনিসের উপর স্থীর করে দেন যা তার জন্য উপকারী। যার ফলে তাকে পরবর্তীতে আফসোস করতে না হয়।

যেমন: বিয়ে, চাকরী, সফর ইত্যাদি বিষয়ে ইস্তেখারা করতে হয়।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন:
“সে ব্যক্তি অনুতপ্ত হবে না যে স্রষ্টার নিকট ইস্তিখারা করে এবং মানুষের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং তার উপর অটল থাকে।”

আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“আর তুমি সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মানুষের সাথে পরমর্শ কর। অত:পর আল্লাহর উপর ভরসা করে (সিদ্ধান্তে অটল থাক)। আল্লাহ ভরসাকারীদেরকে পছন্দ করেন।“

[সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]

কাতাদা(রহঃ) বলেন:
“মানুষ যখন আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরষ্পরে পরামর্শ করে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব চেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার তওফীক দেন।”

ইমাম নওবী রহ. বলেন:
“আল্লাহ তায়ালার নিকট ইস্তেখারা করার পাশাপাশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ভাল লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। কারণ, মানুষের জ্ঞান-গরীমা অপূর্ণ। সৃষ্টিগতভাবে সে দূর্বল। তাই যখন তার সামনে একাধিক বিষয় উপস্থিত হয় তখন কি করবে না করবে, বা কি সিদ্ধান্ত নিবে তাতে দ্বিধায় পড়ে যায়।”
ইস্তিখারা করার নিয়ম:

১) সালাতের ওযুর মত করে ওযু করতে হয়।

২) ইস্তিখারার উদ্দেশ্যে দু রাকায়াত সালাত পড়তে হয়। এ ক্ষেত্রে সুন্নত হল, প্রথম রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর কুল আইয়োহাল কাফিরূন এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ পড়া।

৩) নামাযের সালাম ফিরিয়ে অথবা সালাম ফিরানোর ঠিক পূর্বমুহুর্তে আল্লাহ তায়ালা বড়ত্ব, ও মর্যাদার কথা মনে জাগ্রত করে একান্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দুরূদ পেশ করার পর নিচের দুয়াটি পাঠ করা:


اللَّهُمَّ إنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ , وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ , وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ , وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ , وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ (………) خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي) أَوْقَالَ : عَاجِلِأَمْرِيوَآجِلِهِ) فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ , اللَّهُمَّ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ(……...) شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي (أَوْقَالَ : عَاجِلِأَمْرِيوَآجِلِهِ) فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ ارْضِنِي بِهِ (……).

হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) প্রত্যেক কাজে আমাদের ইস্তিখারা করা সম্পর্কে এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ যখন কোন কাজ করার করবে তখন সে দুরাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, এরপর সে পাঠ করবে:

–আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্তাখিরুকা বি ইলমিকা
ওয়া আস্তাকদিরুকা বি কুদরাতিকা
ওয়া আসআলুকা মিনফাদ্বলিকাল আযীম,
ফা ইন্নাকা তাকদিরু ওয়ালা আকদিরু,
ওয়া তা’লামু ওয়ালা আ’লামু
ওয়া আন্তা আল্লামুল গুয়ূব।
আল্লাহুম্মা ইনকুন্তা তা’লামু
আন্না হাযালআমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবেন)
খাইরুল্লি ফি দ্বীনী ওয়া মাআশীয়ী
ওয়া আক্বিবাতি আমরী
(অথবা বলবে: আ’ জিলি আমরি ওয়া আজিলিহি)
ফাকদিরহু লি ওয়া ইয়াসসিরহু লী
সুম্মা বারিকলী ফিহি
ওয়া ইন কুনতা তা’লামু
আন্না হাযাল আমরা (এখানে নিজের কাজের কথা উল্লেখ করবেন)
শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মাআশীয়ী
ওয়াআক্বিবাতি আমরী
(অথবা বলবে: আ জিলি আমরী ওয়া আজিলীহি)
ফাসরিফহু আন্নিওয়াসরীফনি আনহু
ওয়াকদির লিয়াল খাইরা হাইসু কানা
সুম্মা আরদ্বিনী বিহি।
দু'আর অর্থ এমন:

হে আ্ল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণ চাই –আপনার ইলমের সাহায্যে।
আপনার কাছে শক্তি কামনা করি আপনার কুদরতের সাহায্যে।
আপনার কাছে অনুগ্রহ চাই আপনার মহা অনুগ্রহ থেকে।
আপনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী –আমার কোন ক্ষমতা নাই।
আপনি সর্বজ্ঞ – আমি কিছুই জানি না।
আপনি সকল গোপন বিষয় পূর্ণ অবগত।

“হে আল্লাহ, আপনার ইলমে এ কাজ (এখানে নিজের উদ্দেশ্যপূর্ণ জিনিসের কথা উল্লেখ করবেন) আমার দ্বীন আমার জীবন-জীবিকা ও কর্মফলের দিক থেকে (বা তিনি নিম্নোক্ত শব্দগুলো বলেছিলেন –এ কাজ দুনিয়া ও আখিরাতের দিক থেকে ভাল হয়) তবে তা আমাকে করার শক্তি দান করুন।

পক্ষান্তরে আপনার ইলমে এ কাজ (এখানে নিজের উদ্দেশ্যপূর্ণ জিনিসের কথা উল্লেখ করবেন) যদি আমার দ্বীন আমার জীবন-জীবিকা ও কর্মফলের দিক থেকে (অথবা বলেছিলেন, দুনিয়া ও পরকালের দিক থেকে মন্দ হয়) তবে আমার ধ্যান-কল্পনা এ কাজ থেকে ফিরিয়ে নিন। তার খেয়াল আমার অন্তর থেকে দূরীভূত করে দিন।

আর আমার জন্যে যেখানেই কল্যাণ নিহিত রয়েছে এর ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে এরই উপর সন্তুষ্ট করে দিন । (এরপর নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করবেন।)

[বুখারী, ২য় খন্ড, হাদিস নং: ২৬৩ ]



শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১৮

সুস্থ থাকা অবস্থাই তুমি খারাপ অভ্যাসটি ছেড়ে দাও: মুফতি মেঙ্ক

news-image

মুফতি ইসমাইল মেনক

শিক্ষাবিদ ও দাঈ
একজন ব্যক্তির হার্টের স্পন্দন যখন বন্ধ হয়ে যায়, তিনি ব্যথা অনুভব করেন। তার আত্মীয়-স্বজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডাক্তার যখন বলেন, আপনাকে সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। তিনি নিশ্চিতভাবেই অভ্যাসটি ত্যাগ করবেন। কেন? ডাক্তার বলেছেন তাই।
কিন্তু, আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা জন্য আমরা কয়জন প্রস্তুত এটা বলতে যে “ এখন থেকে এই খারাপ অভ্যাস বাদ”। কয়জন বলতে পারি?
আমরা কি একটা হার্ট অ্যাটাকের জন্য অপেক্ষা করছি, একটা খারাপ অভ্যাস বাদ দেয়ার জন্য? যখন আল্লাহ বলছেন, এটার জন্য অপেক্ষা করো না, আমি তোমাকে একটি সুস্থ শরীর দিয়েছি। সুস্থ থাকা অবস্থাই তুমি খারাপ অভ্যাসটি ছেড়ে দাও।
কিছু লোক আল্লাহর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা কখনোই তার ইবাদত করে না। তখন, আল্লাহ কি করেন? তিনি তাদেরকে একটু সহযোগিতা করেন। সেই সহযোগিতাটা কি?
তিনি তাদেরকে এমন অসুস্থ করে দেন যে ডাক্তার ও তাকে সাহায্য করতে পারে না। তখন তারা বলতে বাধ্য হয় যে ‘ইয়া আল্লাহ’
তারা আল্লাহর কাছে প্রথমবারের মত হাত তুলে এবং নামাজে আসে। মাশাআল্লাহ! এটা কাম্য নয়। আমরা সত্যি ভাগ্যবান যে আমরা আল্লাহর কাছে হাত তোলার আগেই মৃত্যুবরণ করিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে আল্লাহর কাছে হাত তোলার জন্য (খারাপ) কিছু হওয়ার আগ পর্যন্ত কি আমাদের অপেক্ষা করা উচিৎ?
আল্লাহ এই জন্যই কৃতজ্ঞ হতে বলেছেন এবং শয়তান আমাদেরকে কুমন্ত্রনা দেবার আগেই তার সম্পর্কে জানতে বলেছেন যাতে করে আমারা বুঝতে পারি যে শয়তান কিভাবে আমাদেরকে বিপথে নিয়ে যায়।
যারা সারা জীবন ব্যভিচার করেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন তারা এটি করে কী অর্জন করতে পেরেছে? যারা সারা জীবন পাপ (প্রতারনা, চুরি, মদ্যপান … ইত্যাদি ) করে যাচ্ছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন তারা এটি করে কী অর্জন করতে পেরেছে?
তারা কি অর্জন করেছে? ক্ষণিকের আনন্দ- তাইতো? এখন আল্লাহ যদি আপনার সহায় হয়, তিনি আপনাকে এটি বলার সুযোগ দিবেন যে ‘ও আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমি এ কাজ আর কখনোই করবো না’।
AddThis Sharing ButtonsShare